বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরাও এবার গুগল বার্ডের চ্যাটবটটি ব্যবহার করতে পারবেন। সেই সঙ্গে আবার বার্ডের একাধিক নতুন ফিচার্সও যোগ করেছে গুগল। এর ফলে এখন ওপেনএআই চ্যাটজিপিটির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করার মতো ক্ষমতাবান হয়ে গেল গুগল বার্ড এআইয়ের।
চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী বার্ডকে অনেক আগেই বাজারে এনেছিল গুগল। এবার সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টটি বার্ড এআই চ্যাটবটকে বিশ্বের আরো ১৮০টি দেশে চালু করল।
বহু দিন ধরেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বার্ড ব্যবহারের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। গুগল একটি ব্লগ পোস্টে লিখছে, ‘যেহেতু আমরা অতিরিক্ত ফিচার যোগ করতে থাকি এবং নতুন বৈশিষ্ট্যগুলো প্রবর্তনের মাধ্যমে অ্যাপটিকে আরো পরিণত করতে থাকি, বার্ডকে আরো বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। যাতে তারা এটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন এবং আমাদের সঙ্গে তাদের প্রতিক্রিয়া শেয়ার করতে পারেন। সেই লক্ষ্যেই আজ আমরা ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে বার্ডকে নিয়ে আসছি। আরো একাধিক জায়গাতে এটি শিগগিরই চলে আসবে।’
সংস্থাটি আরো বলছে, প্রথম থেকেই আমরা যে বিষয়টি বলে আসছি, সেটা হলো নতুন প্রযুক্তি হিসেবে বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলোর এখনো বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এখন আমাদের এআই নীতিগুলো মেনে চলার পাশাপাশি গুণমানের বিষয়টিকেও নিশ্চিত করতে হবে।
গুগল জানিয়েছে, বার্ড খুব গিগগিরই জাপানিজ ও কোরিয়ানসহ আরো ৪০টি ভাষার সাপোর্ট পেতে চলেছে। বার্ড তার ক্ষমতায়নের জন্য গুগলের লেটেস্ট লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম), পিএএলএম২ এর ওপরে নির্ভরশীল। খুব সম্প্রতিই পিএএলএম২ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে সুইচ করার বিষয়টি সক্রিয় করা হয়েছে বার্ডে। সেই সঙ্গে আবার কোডিং ক্ষমতা, অ্যাডভান্সড ম্যাথ এবং রিজনিং স্কিলসহ আরো অনেক কিছুই যুক্ত করা হয়েছে এতে।
প্রসঙ্গত, গুগল বার্ড প্রাথমিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনে চালু করা হয়েছিল। চ্যাটবটটি এখন বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলে চালু রয়েছে। খুব শিগগিরই বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও নিয়ে আসা হবে এআই ভিত্তিক চ্যাটবটটি। বিকাশ ও নতুন ব্যবসায় সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কিভাবে এশিয়ার মানুষ নিজেদের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, টেলিনর এশিয়ার সমীক্ষায় তাই উঠে আসে।
‘ডিজিটাল লাইভস ডিকোডেড’-এর দ্বিতীয় অংশে মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে মহামারির পরবর্তীতে কিভাবে কাজের নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠছে এবং পরিবর্তিত বাস্তবতায় মানুষ কিভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে তা প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষার এই অংশের উঠে এসেছে, মোবাইল কানেক্টিভিটি ক্যারিয়ারের পথ সুগম করেছে; তবে নিয়োগকর্তাদেরও কর্মস্থলের নীতি ও অনুশীলন উন্নত করার দিকে গুরুত্বারোপ করতে হবে।
এতে দেখা যায়, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে, ক্যারিয়ার দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে এবং নতুন ব্যবসার সুযোগ কাজে লাগাতে এশিয়ার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা পেশাগত জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। একইসঙ্গে হাইব্রিড কাজের ধরনের নানা দিক এবং এটা কিভাবে কর্মী-নিয়োগকারীদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে, তা এ সমীক্ষায় উঠে আসে।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের প্রায় আট হাজার মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর এ সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার ৫৭ শতাংশ বাংলাদেশি জানান, মোবাইল ডিভাইস ও প্রযুক্তির কারণে তাদের উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ বা তার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে; যেখানে ২৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি। ক্যারিয়ার ও দক্ষতার উন্নয়নে মোবাইল ডিভাইস ও প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব আছে কি না এ প্রশ্নে এমন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি হয়েছে বলে জানান ৬৯ শতাংশ বাংলাদেশি।
লিঙ্গভিত্তিক ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৭ শতাংশ পুরুষ উত্তরদাতা জানিয়েছেন ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের উন্নতি হয়েছে। ৫৭ শতাংশ মনে করেন, মোবাইল ডিভাইস থেকে আয়ের নতুন উৎস তৈরি হতে পারে। ৫৪ শতাংশ জানিয়েছেন এর মাধ্যমে নতুন চাকরি ও ক্যারিয়ারের সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কাজের উদ্দেশে আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার বাড়াবেন বলে বিশ্বাস করেন ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা।
এছাড়া মোবাইল প্রযুক্তির পূর্ণ ব্যবহারে অথবা কাজের ক্ষেত্রে এর ফিচারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় সবচেয়ে বড় বাধা বলে জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ বাংলাদেশি। আর প্রযুক্তির ওপর ভরসা না পাওয়া এবং এ সংক্রান্ত দক্ষতা ও জ্ঞানের অভাবে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না যথাক্রমে ৪৯ ও ৬০ শতাংশ বাংলাদেশি।
সমীক্ষার উদ্দেশ্য ও মূল বিষয় সম্পর্কে টেলিনর এশিয়ার হেড ইয়র্গেন রোস্ত্রাপ বলেন, আমাদের গবেষণা থেকে দেখা যাচ্ছে, মোবাইল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা, প্রবৃদ্ধি, সহজলভ্যতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা নিয়ে শহর ও গ্রামের মানুষ, বড় প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগ, বিভিন্ন শিল্পখাত এমনকি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অধস্তন কর্মীদের পার্থক্য রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, আর এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা ও সমক্ষতা নিয়ে মানুষ উদ্বিগ্ন। অনেক সময় বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে কাজের ক্ষেত্রে নিজেদের সম্ভাবনার বিকাশে অনেকেই মোবাইলের পূর্ণ ব্যবহার করছেন না। অনলাইনে কাজের হার বেড়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সমীক্ষার ফলাফল সঠিক টুল ব্যবহারে এবং ব্যবধান কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের মাধ্যমে ডিজিটাল কাজের পরিবেশ উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, মহামারির কারণে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত হয়েছে; ডিজিটাল বৈষম্য উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন কমিউনিটির ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের মানুষ দেখেছেন মোবাইল ডিভাইস ও প্রযুক্তি তাদের কিভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এখন সম্ভাবনা বিকাশে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাসকারীদের জন্যও ডিজিটাল দক্ষতার সুযোগ উন্মোচন করার দায়িত্ব আমাদের। আমরা চাই টেকসই অর্থনীতির বিকাশে কেউ পেছনে পড়ে না থাকুক।
আজমান আরও বলেন, মোবাইল কানেক্টিভিটি কাজের ধরণ রূপান্তরের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা যোগাযোগ উন্নত করবে, উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে এবং নতুন সুযোগ তৈরি করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে উন্নত মোবাইল কানেক্টিভিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।