বিএনপি পদযাত্রার নামে সারাদেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির জন্ম হয়েছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। তাই তারা ষড়যন্ত্র ছাড়া রাজনীতি বোঝে না। আওয়ামী লীগ ফাইনাল খেলার জন্য প্রস্তুত। খেলা হবে সামনাসামনি। আওয়ামী লীগ মাঠে আছে, রাজপথে আছে। আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই সমাবেশ হবে। বিএনপি আগুন-সন্ত্রাস করলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। শনিবার সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় কেন্দ্র ঘোষিত আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বক্তারা এ কথা বলেন।
সুনাসগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের গতি দেখে ঘোড়াও হাসে, মানুষও হাসে। তারা এখন আহত অবস্থায় ভয়ে ভয়ে পদযাত্রার কথা বলছে। খবর নিয়ে দেখুন, কয়টা ইউনিয়নে এই পদযাত্রা হয়েছে। বিএনপির আন্দোলন এখন মরা গাঙের মতো। এতে কোনো ঢেউ নেই।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আসার পর বাংলাদেশ বদলে গেছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দেখে বিএনপির ভেতরে শুধু এখন জ্বালারে, জ্বালা। এত জ্বালা তারা কোথায় রাখবে। তাই আন্দোলনের নামে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করলে খবর আছে। নির্বাচনের মাঠে আসুন খেলা হবে।’
বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি পানি ঘোলা করে আসবে। না এসে উপায় নেই। গত নির্বাচনেও তারা এসেছিল। তারা নির্বাচনে জিতবে পারবে না। আমাদের নেত্রী ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছেন। জনগণ যে রায় দেবে, আমরা সেই রায় মেনে নেব।’
বিএনপিকে পাল্টাপাল্টি না করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা শান্তি সমাবেশ করছি। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রতিদিনই সমাবেশ হবে। আওয়ামী লীগ সমাবেশের ডাক দিলে মহাসমাবেশ হয়। আর বিএনপি মহাসমাবেশের ডাক দিয়ে সমাবেশও করতে পারে না। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোথাও বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেয়নি।’
শনিবার সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। পৌরশহরের সরকারি জুবিলী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ সম্মেলন হয়। দুপুর ১২টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল, পারেনি। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা করেছিল। সেই বিএনপি বড় বড় কথা বলে। বিএনপিকে মাঠেই মোকাবিলা করা হবে। সাপকে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু বিএনপি-জামায়াতকে বিশ্বাস করা যায় না।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শান্তি সবাবেশ করেছে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে ভোলার লালমোহনে ৯ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আখাউড়ায় প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া জামালপুর, বরগুনা, বরিশাল, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শান্তি সমাবেশ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
গোপালগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কাশিয়ানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে সংসদ সদস্য ফারুক খান বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশে অরাজকতা, নৈরাজ্য ও আগুন সন্ত্রাস ছাড়া কিছুই উপহার দিতে পারেনি। তারা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপি নির্বাচন নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই চান গণতান্ত্রিকভাবে দেশে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন। জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন হবে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে অনুরোধ করেন।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার চরবাণিপাকুরিয়া ইউনিয়ন শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মির্জা আজম বলেন, ‘কর্মসূচির নামে বিএনপির অগ্নি-সন্ত্রাস থেকে দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। বিষধর সাপকে বিশ্বাস করা গেলেও বিএনপিকে বিশ্বাস করা যায় না। বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না। বিএনপি আন্দোলনের নামে যখন রাস্তায় নামে, তখন দেশের মানুষ আতঙ্কিত থাকে। সেই আতঙ্কিত মানুষকে শক্তি ও সাহস জোগানোর জন্য আওয়ামী লীগ মাঠে রয়েছে।’
পটুয়াখালীর বাউফলে কালিশুরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক শান্তি সমাবেশে পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘বিএনপির সরকার হটানোর কর্মসূচি দেওয়া উচিত নয়। জনগণের কাছে অপকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়ার কর্মসূচি দেওয়া উচিত বিএনপির। আগেও বিএনপি ভাঙচুরসহ পরিবেশ অশান্ত করেছে। এ কারণে মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ আতঙ্কে ছিল। এখন তারা মনে করেছে মানুষের কাছে যদি না যাই, অতীতের কার্যক্রম নিয়ে যদি দুঃখ প্রকাশ না করি, তাহলে মানুষ আমাদের গ্রহণ করবে না।’
কালিশুরি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নেছারউদ্দিন শিকদারের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মাগুরা কছুন্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের এক শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে যড়যন্ত্র করছে। পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তারা। তাদের এ অপচেষ্টা সফল হবে না। নির্বাচনের মাধ্যমেই সব ফয়সালা হবে।’