নারী-পুরুষ সকলেরই সৌন্দর্যের প্রধান অনুষঙ্গ চুল। কত কবিতা কত গান রচিত হয়েছে এই চুল নিয়ে। চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নেশা... খোলা চুলে হেঁটে যাওয়া কোনো তরুণী দেখলে মনের অজান্তেই জীবনানন্দ দাশের এই কবিতার মাঝে ডুবে যাই। চুলকে সুন্দর করতে যুগে যুগে আবিষ্কৃত হয়েছে কত না উপায়। ঝলমলে, মসৃণ, নরম চুল পেতে বর্তমানে হেয়ার স্পা অনেকের কাছেই খুব প্রিয়। এর মাধ্যমে চুলকে সহজেই স্বাস্থ্যকর করা যায়। রাস্তাঘাট ও শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিউটি পার্লার ও স্যালন। সেখানে রয়েছে নানা নামের হেয়ার স্পা। তবে যাদের সময় বের করা কঠিন এবং বাজেটেও সমস্যা থাকে তারা ঘরেই করে নিতে পারেন। ঘরে বসে কিভাবে সুন্দরভাবে হেয়ার স্পা করা যায় সেই সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন রূপ বিশেষজ্ঞ আজিমুন্নেছা তুলি।
হেয়ার স্পার রয়েছে চারটি ধাপ। অয়েল ম্যাসেজ, স্টিম, ক্লেনজিং এবং ট্রিটমেন্ট। এরমধ্যে স্টিম সবার জন্যই একরকম। বাকিগুলো চুলের ধরনের ওপর নির্ভর করে। সঠিকভাবে স্পা করতে পারলে রুক্ষতা ও নির্জীবতার সঙ্গে সঙ্গে খুসকি, চুল পড়া, ডগা ফাটার মতো অনেক সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
প্রথমত, চুল আঁচড়ে ঝট ছাড়িয়ে নিতে হবে। নারিকেল তেল, আমন্ড বা অলিভ অয়েল স্কাল্পে ম্যাসাজ করতে হবে কমপক্ষে ১০ মিনিট। অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকলে ম্যাসাজ করার প্রয়োজন নেই। এরপরে চুলে গরম ভাপ দিবেন। একটি টুলের ওপর বসে সামনের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে দিয়ে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন, বাষ্প যেন তোয়ালের বাইরে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। চুলকে সরাসরি গরম পানির সংস্পর্শে আনা যাবে না। ভাপ দেয়া যাদের কাছে কঠিন মনে হবে তারা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে ভালো করে নিংড়িয়ে চুলে জড়িয়ে রাখতে পারেন। এভাবে কমপক্ষে ১৫ মিনিট স্টিম দিতে হবে।
এরপরে চুল ভালো করে ধুয়ে নেবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। শ্যাম্পু মাথায় দিয়ে ২ মিনিট রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সবশেষে চুলে কন্ডিশনার লাগাবেন। তবে কোনোভাবেই যেন মাথার স্কাল্পে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগলে চুল ওঠা বাড়বে। তাই গোড়া থেকে ন্যূনতম তিন ইঞ্চি রেখে কন্ডিশনার লাগাবেন।
চুল পরিষ্কার করে ভেজা অবস্থাতেই ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে চুলের ধরন বুঝে উপকরণ বেছে নিতে হবে। শুষ্ক চুলের জন্য অ্যাপেল সিডার ভিনেগার দেড় টেবিল চামচ, মধু ২ টেবিল চামচ এবং ১ চা-চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিক্স করে স্ক্যাল্পে ও চুলে লাগাতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নেবেন। চুলে খুশকির সমস্যা থাকলে ছয়-সাতটি বা পরিমাণমতো স্ট্রবেরি বেটে বা মিক্সার মেশিন দিয়ে মিক্স করে কয়েক ফোঁটা পেপারমিন্ট বা টি-ট্রি অয়েল মিশিয়ে চুলে ও স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন আধাঘণ্টা। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এছাড়াও প্রোটিন প্যাক হিসেবে তৈলাক্ত চুলের জন্য ডিমের সাদা অংশ, শুষ্ক চুলে টক দই এবং স্বাভাবিক চুলের জন্য দুধ ব্যবহার করতে পারেন। আবার অ্যাভোকাডো, টক দই বা মধু দিয়ে বানানো মাস্কও লাগাতে পারেন যে কোনো চুলে। ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পরে চুল ধুয়ে শুকাতে হবে। ফল দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে সবশেষে সেরাম ব্যবহার করুন।
তবে কর্মজীবী নর-নারীরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে হেয়ার স্পা নিতে ঝামেলা মনে করলে চলে যাবেন কাছাকাছি কোনো ভালো পার্লারে। সেখানে চুলের ধরন অনুযায়ী পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ধরনের হেয়ার স্পা। অভিজ্ঞ একজন রূপ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে স্পা করুন। বিউটি পার্লারে গেলে অবশ্যই দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে বের হবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ সোহেল
রানা।
নির্বাহী সম্পাদক: ডাঃ ফজলুর রহমান
(সবুজ)