দশ বছর আগে অভাবের তাড়নায় ১০ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে মৎস্য হ্যাচারি থেকে রুই মাছ ও মনোসেক্স মাছের পোনা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করেন যশোরের শিল্পী খাতুন (৪৫)। বর্তমানে তিনি গোটা জেলায় একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত। শিল্পী খাতুন যশোর সদর উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের মৃত আঁখি বিশ্বাসের মেয়ে। হাঁস-মুরগি পালন করতে করতে অভাবের তাড়নায় নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নেন মৎস্য খামার তৈরি করার।
শুরু থেকে স্বপ্ন বুনতে থাকেন একজন সফল নারী উদ্যেক্তা হওয়ার। তার স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। শুধু শিল্পী খাতুন স্বাবলম্বী হননি, তিনি গ্রামের আরও দশটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। শিল্পী খাতুন জানান, তিনি খুব দুরবস্থার মধ্যে দিয়ে জীবনযাপন করছিলেন। ২০১২ সালে হাঁস-মুরগি পালন করতে করতে হঠাৎ ভাগ্যের পরিবর্তন করতে নারী হওয়া সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নেন।
এরপর যশোরের চাঁচড়া মৎস্য হ্যাচারি থেকে পোনা মাছ সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর বাড়িতে চৌবাচ্চা করে সেখানে মাছের পোনা চাষ শুরু করেন। শিল্পী খাতুন তার খামারের নাম দেন ‘শিল্পী মৎস্য খামার’। ধীরে ধীরে শিল্পীর মৎস্য খামারের পরিধি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে শিল্পী খাতুনের মনে স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করার আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বর্তমানে শিল্পী খাতুন তার বাসা বাড়িতে রঙিন মাছের হ্যাচারি গড়ে তুলেছেন। তিনি এ রঙিন মাছ সাতক্ষীরা জেলার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন এবং বাড়ির পাশেই নদীর কিনারা ঘেঁষে তৈরি করেছেন খাঁচায় সাদা মাছ চাষের হ্যাচারি। সব মিলিয়ে তার দুটি হ্যাচারিতে মাছের সংখ্যা ৩০ হাজারেরও বেশি। শুধু মাছের হ্যাচারি প্রতিষ্ঠা করে শিল্পী খাতুন থেমে যাননি। তিনি মাছের খাবার নিজস্ব কারখানা থেকেই উৎপাদন করেন।
মাছের খাবার উৎপাদনে তিনি যশোরের বিভিন্ন বাজার থেকে কাঁচামাল হিসেবে ভুট্টা, শুঁটকি মাছ, আটা, গমের ভুসি, পালিসের গুঁড়া ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকেন। তার নিজস্ব কারখানায় প্রতিদিন প্রায় এক টন মাছের খাবার উৎপাদিত হয়। যা তার মৎস্য খামারেই ব্যবহার করা হয়। শিল্পী খাতুন আরও জানান, এ মৎস্য খামার থেকে বর্তমানে তার মাসিক উপার্জন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
এর আগে ২০১৮ সালে তৎকালীন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমানের কাছ থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও পেয়েছেন নানা সম্মাননা, সংবর্ধনা পদক ও সনদ।
শিল্পীর মৎস্য খামারের কর্মচারী হিরাজ হোসেন বলেন, আমরা দশজন এখানে দিন চুক্তিতে কাজ করি। এখানে কাজ করায় আমাদের দূরে জীবিকা নির্বাহের জন্য যেতে হয় না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে আছি। আরেক কর্মচারী শুকুরেন্নেছা বলেন, আমার সংসারে অভাব অনাটন ছিল। এখানে গত কয়েকবছর কাজ করে আমি সংসারে সচ্ছলতা এনেছি। এমন উদ্যোগ প্রতিটি গ্রামের মানুষ নিলে দেশের বেকারত্ব সমস্যা ঘুচবে। যশোর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রেজা বলেন, শিল্পী খাতুন মৎস্য খামার গড়ে তুলে এখন স্বাবলম্বী। তিনি একজন সফল নারী উদ্যেক্তা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ সোহেল
রানা।
নির্বাহী সম্পাদক: ডাঃ ফজলুর রহমান
(সবুজ)